হেদায়াত

চতুর্থ কথা এই যে, বিরোধিতা যতই অহেতুক হোক না কেন এর জবাবদানের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত সীমা কখনো লংঘন করবেন না। প্রত্যেকটি শব্দ বলা কিংবা লেখার পূর্বে তা সত্যের পরিপন্থী কিনা এবং আল্লাহর দরবারে তার হিসেব পেশ করতে পারেবন কিনা তা আপনি উত্তমরূপে বিচার-বিবেচনা করে দেখবেন। আপনার বিরুদ্ধবাদীরা আল্লাহকে ভয় করুক কিংবা না করুক আপনাকেই ভয় করে চলতে হবে।

পঞ্চম কথাএই যে, বিরোধিতা ফলে আপনাদের আন্দোলনের জন্য সাফল্য ও অগ্রগতির যে অপূর্ব সুযোগ উপস্থিত হয়েছে তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করুন। আল্লাহ তাআলা এভাবে আপনার বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছেন। আপনারা এতে ভীত না হয়ে এ সুযোগে কাজ করে নিন। আরবে নবী করীম (স) এর বিরুদ্ধে যখন এ ধরনের অপপ্রচার চলছিলো, তখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে …বলে খোশ খবর দিয়েছেন।

আমাদের উচিত শোকর আদায় করা, কারণ, একদিকে সরকার ক্রমাগত সার্কুলার জারী করে সরকারী কর্মচারীদের সাথে আমাদের পরিচয় লাভের মূল্যবান সুযোগ করে দিয়েছেন। অপরদিকে গুমরাহ দলগুলো নিজ মহলে আমাদেরকে পরিচিত করে তুলছে। এছাড়া যে সমস্ত আলেম আমাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারী করেছেন তাঁরাও দেশের ধর্মীয় ভাবধারাসম্পন্ন এলাকার সর্বত্র আমাদের সম্পর্কে প্রচার করেছেন। এ বিপুল প্রচার আমাদের সমস্ত শক্তি নিয়োগ করলে বিশ বছরেও সম্ভব হতো না। এখন আমাদের কাজ হলো যেসব জায়গায় আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা প্রচার হয়েছে, সেখানে আমাদের সঠিক পরিচয় দিতে হবে। ইনশাআল্লাহ এতে আমাদের দ্বিগুণ লাভ হবে। যারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারের রহস্য উপলদ্ধি করতে পারবে, তাঁরা শুধূ জামায়াতে ইসলামীর প্রতি আস্থা-ই স্থাপন করবেন না, বরং তাঁরা শুধু জামায়াতে ইসলামীর প্রতি আস্থা-ই স্থাপন করবেন না, বরং তাঁদের নিকট আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের বাহাদুরীও ধরা পড়ে যাবে। সত্য ও ন্যায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রের সুস্পষ্ট প্রমাণ প্রত্যক্ষ্য করার পর তাঁদের মনে বিরুদ্ধাবাদীদের সম্পর্কে যে শ্রদ্ধাভাবটি রয়েছে, তাও বিলিন হয়ে যাবে। এজন্যই আল্লাহ তাআলা শয়তানের চক্রান্তকে বিশেষ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। সে তাঁর অনুগামীদের হাতে এমন হাতিয়ার তুলে দেয়, যা সাময়িকভাবে বড়ই কার্যকরী মনে হলেও শেষ পর্যন্ত তা ব্যবাহারকারীদের মূল শিরা-ই কেটে ফেলে। পরিশেষে আমি জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট আলেম কর্মীগণকে বলতে চাই যে, আপনারা নিজ নিজ গোত্রের আলেমগণকে বিষেষভাবে বুঝিয়ে দিন, তাঁদের সাথে ব্যক্তিগত কিংবা সংঘবদ্ধভাবে দেখা-সক্ষাত ও চিঠি-পত্র আদান-প্রদান করবেন। তাদেরকে আপনারা বুঝিয়ে বলুনঃ আপনারা যা করেছেন, তার পরিণাম চিন্তা করেছেন কি? ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে আপনাদের সাথে আধুনিক শিক্ষিত লোকদের যে বিরোধ দেখা দিয়েছিলো তার ফলে শুধু আধুনিক শিক্ষিত লোকদের যে বিরোধ দেখা দিয়েছিলো তার ফলে শুধু আপনাদের নয়, বরং ইসলামী আধুনিক শিক্ষিতদের মধ্যে থেকে একদল যোগ্যতম ব্যক্তিকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করতে শুরু করেছে এবং দীনের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা ও আকর্ষণের ফলেই তারা আপনাদের নিকটবর্তী হচ্ছে, ঠিক এ সময়েই আপনারা জামায়াতের বিরুদ্ধে আক্রমণ অভিযান শুর উ করলেন। তাও আবার এমন ন্যাক্কারজনক পন্থায় যে, আধুনিক শিক্ষিতগণ তো দূরের কথা, আপনাদের শাগরেদগণের মনেও আপনাদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ সমস্ত কার্যকলাপ দ্বারা আপনাদের কি উপকারটা হবে বলে আশা করেন। একথাতো আপনারও জানেন যে, এদেশে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তন ও তা সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করা অন্তত আপনাদের কাজ নয়। এ কাজ বরং আপনাদের পরিবর্তে আধুনিক শিক্ষিত লোকেরাই করতে পারেন, যারা ইসলামী আদর্শ অনুসারে নিজেদের চিন্তাধারা, কার্যকলাপ ও নৈতিক চরিত্রের সংশোধন-পুনর্গঠন করেছে। আর তারাই এখন জামায়াতে ইসলামীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এদের বাদ দিয়ে এ শ্রেণীর লোকদের মধ্যে সক্রিয় ও শক্তিশালী ইসলামী ভাবাপন্ন কোনো দলের অস্তিত্বও আপনারা প্রমাণ করতে পারবেন না। আর আপনাদেরও তো এরূপ ক্ষমতা নেই যে, তাদের মধ্যে থেকে এমন কোনো দল আপনারা গড়ে তুলবেন। এমতবস্থায় আপনারা জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতা করতে থাকলে এর পরিষ্কার অর্থ দাঁড়াবে যে, আপনারা যে কোনো ফাসেক-ফাজের ও গুমরাহ দলের নেতৃত্ব স্বচ্ছন্দে বরদাশত করতে পারেন, কিন্তু আপনাদের সহ্য হয় না কেবলমাত্র দীনদার দলের নেতৃত্ব, সত্যিই কি আপনারা এ ভূমিকা গ্রহনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন? এবং এজন্য আল্লাহর কাছে যে জবাবদিহি করতে হবে তার পরিণাম কি দাঁড়াতে পারে, তাও ভেবে দেখেছেন কি? যদি ধরেও নেয়া যায় যে, কতিপয় ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর সাথে আপনাদের মতবিরোধ রয়েছে, তবে তা নিয়ে আন্দোলন করার উপযুক্ত সময় কি এটাই? এসব মতবিরোধ কি সাক্ষাত, আলাপ-আলোচনা কিংবা অন্য কোনো উপায়ে দূর করা সম্ভব ছিলো না? এ বিষয়টা কি এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে, জামায়াতের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারী করা, প্রচারপত্র ছড়ানো এবং পুস্তিকা প্রকাশ ছাড়া গত্যন্তর ছিলো না। এতসব আয়োজন যদি সত্যিই অপরিহার্য ছিলো এবং আপনারা একান্তই দীনের উদ্দেশ্য এহেন মহৎ(?) কাজে ব্রতী হয়ে থাকেন, তবে জিজ্ঞেস করি, এ উদ্দেশ্য কি কেউ অপরের বক্তব্যকে বিকৃত করে এবং সে যা বলেনি তাই তার উপর চাপিয়ে দিয়ে থাকে? এবং তার রচনা দ্বারা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পরও কি তা আকঁড়িয়ে থাকে? আমাদের জামায়াতে বিভিন্ন দীনি মাদ্রাসায় শিক্ষাপ্রাপ্ত যেসব কর্মী রয়েছেন এই সকল কথা তাঁদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের বুযর্গানদের থেকে স্পষ্পভাবে আমি বলতে চাই যে, দেওবন্দ ও মাযাহেরুল উলুমের বুযর্গান এ নিয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রচার কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন যে, পাক-ভারতের সর্বত্র তাঁদের শাগরেদগণ ছড়িয়ে রয়েছেন। কাজেই তাঁরা যদি কোনো ফতোয়া কিংবা প্রচারপত্র প্রকাশ করেন,তবে সমস্ত দেওবন্দী ও মাযাহেরী শাগরেদ চোখ বন্ধ করে নিছক গুরুভক্তি ও উপদলীয় বিদ্বেষ নিয়ে চারদিকে থেকে তাঁদের সুরে সুর মিলিয়ে জামায়াতের উপর হামলা চালাতে থাকবে। এমতবস্থায় তাঁদের ভ্রান্ত ধারণা দূর করা এবং তাঁদেরকে একথা বুঝিয়ে বলা আপনাদেরই কর্তব্য যে, দেওবন্দ ও মাযহেরুল উলুম হতে আমরা পবিত্র কুরআন ও হাদীসের শিক্ষা অবশ্যই হাসিল করেছি; কিন্তু ঈমান বিক্রি করতে শিখিনি। কুরআন ও হাদীসের শিক্ষার পরও যদি কেউ সত্য ও ন্যায়পরায়নতার পরিবর্তে ওস্তাদ ও পীর পূজাই শিখলে এবং ইসলামী ভাবধারার পরিবর্তে উপদলীয় কোন্দলেই অভ্যস্ত হলো, তবে তাতে লাভ কি?

দাওয়াতের সংক্ষিপ্ত কোর্স

অতপর আমি আন্দোলনের প্রসারকল্পে আপনাদেরকে কয়েকটি পরামর্শ দিতে চাই। এ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন সম্পর্ক পূর্ণাঙ্গ অথচ সংক্ষিপ্ত একটি পাঠ্য তালিকা রচিত হয়েছে। এর সাহায্য আপনারা সহজে কাজ করতে পারেন। এতদিন জামায়াতের কর্মীদের একটি বিশেষ সমস্যা ছিলো যে, জামায়াতের পুস্তাকাদি সাংখ্যায় যথেষ্ট ছিলো না বলে সকল লোককে তা পড়ানো অত্যন্ত অসুবিধাজনক ছিলো। এছাড়া আর একটি অসুবিধা ছিলো যে, জামায়াতের পুস্তকাদির মধ্যে থেকে কোন কোন পুস্তক অধ্যয়ন করার পর একজন লোক জামায়াতে শরীক হওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে-এটা নির্ধারণ করা। কিন্তু আমাদের কয়েকটি জরুরী পুস্তক প্রকাশের ফলে এ অসুবিধা দূরীভূত হয়েছে।

১. বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামী

২. জামায়াতে ইসলামীর বৈশিষ্ট্য

৩. ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি

৪. মুসলমানদের অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত কর্মসূচী

৫. জামায়াতে ইসলামীর কার্যবিবরণী

৬. জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস

৭. ইসলামী বিপ্লবের ৭ দফা গণদাবী

কেউ যদি উক্ত পুস্তিকাসমূহ অধ্যয়ন করে, তাকে জামায়াতে শামিল হওয়ার ব্যাপারে তার মর্যীর উপরেই ছেড়ে দিন।

জামায়াতে শরীক হওয়ার পর তাকে অবশ্যই জামায়াতের ও যাবতীয় পুস্তিকাদি পাঠের পরামর্শ দিবেন। কারণ, এছাড়া তার চিন্তাধার ও নৈতিক চরিত্র উত্তমরূপে গঠিত হবে না এবং ইসলামী দৃষ্টিভংগীতে দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্নমুখী সমস্যার সঠিক সমাধান কি হওয়া উচিত সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারবে না। তবে জামায়াতে শরীক হওয়ার পূর্বে সমস্ত পুস্তক পাঠ করা কারো পক্ষে জরুরী নয়।

মহিলা কর্মীদের প্রতি উপদেশ

এতক্ষণ আমি যে সমস্ত বিষয়ে আলোচনা করেছি, তার অধিকাংশই পুরুষ ও মহিলাদের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমি জামায়াতের মহিলা কর্মী এবং জামায়াত সম্পর্কে আগ্রহপরায়ণ মহিলাদের উদ্দেশ্য কয়েকটি কথা বিশেষভাবে আরয করতে চাই।

সর্বপ্রথম আরয এই যে, আপনারা নিজেদের জীবনকে গড়ার জন্য দীন ইসলাম সম্পর্কে যথাসাধ্য জ্ঞান লাভের চেষ্টা করুন।

আপনারা শুধু কুরআন শরীফের অর্থ বুঝে পাঠ করেই ক্ষান্ত হবেন না, বরং হাদীস এবং ফিকাহ সম্পর্কে কিছু পড়াশুনা অবশ্যই করবেন। আপনাদের শুধু দীন ইসলামের মূল বিষয়বস্তু এবং ঈমানের দাবী সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান লাভই যথেষ্ট নয়, বরং আপনাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের দৈনন্দিন কাজ-কর্ম সম্পর্কে দীন ইসলাম কি কি নির্দেশ দিচ্ছে তাও আপনাদের জানতে হবে। আজ মুসলমান পরিবার-সমূহে যে শরীয়াত বিরোধী কার্যকলাপ প্রচলিত হয়েছে এবং জাহেলী রসম-রেওয়াজ স্থান লাভ করেছে, এর একটি অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে দীন ইসলামের হুকুম আহকাম সম্পর্কে মহিলাদের ব্যাপক অজ্ঞতা। তাই সর্বপ্রথম নিজেদের দুর্বলতাসমূহ দূর করাই আপনাদের প্রধান কর্তব্য।

দ্বিতীয় কাজ এই যে, দীন ইসলাম সম্পর্কে আপনি যতটুকু শিক্ষালাভ করবেন, তদানুযায়ী নিজেদের বাস্তব জীবন, নৈতিক চরিত্র, আচার-ব্যবহার ও সাংসারিক জীবনকে গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন। একজন মুসলমান মহিলার চরিত্র এতখানি মযবুত হওয়া দরকার যে, কোন জিনিসকে যদি সথ্য বলে বিশ্বাস করে, তবে তার গোটা সংসার ও পরিবার-পরিজন সকলে একযোগে বিরোধিতা করলেও যেন তার বিশ্বাস অটল থাকে। আবার যে জিনিসকে সে বাতিল বা অন্যায় বিশ্বাস করবে কারো চাপে পড়ে এটাকে সত্য বলে স্বীকার করবে না। মাতা, পিতা, স্বামী ও পরিবারের অন্যান্য গুরুজন নিশ্চয়ই শ্রদ্ধার পাত্র, তাঁদের হুকুম অবশ্যই পালন করতে হবে, তাদের সাথে অবশ্যই আদব রক্ষা করে চলতে হবে; তাদের সাথে বেয়াদবি কিংবা উচ্ছৃংখলাপূর্ণ ব্যবহার করা চলবে না। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অধিকার সকলের উর্ধে। কাজেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফারমানীর পথে চলতে কেউ নির্দেশ দিলে আপনারা পরিষ্কার ভাষায় তা অস্বীকার করবেন। তিনি আপনার পিতাই হোন কিংবা স্বামী এ ব্যাপারে কোনো প্রকার দুর্বলতার প্রশ্রয় দেয়া চলবে না। বরং এর পরিণাম হিসেবে এ পার্থিব জীবনের যত ভয়ঙ্কর দেখা দিক না কেন, আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা রেখে আপনাকে তা হাসিমুখে বরদাশত করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। দীনের আনুগত্যের ব্যাপারে আপনি যতখানি দৃঢ়তা প্রকাশ করবেন, ইনশাআল্লাহ আপনার পরিবেশে ততই এর শুভ প্রভাব বিস্তারিত হবে। এবং বিভ্রান্ত পরিবারগুলোর সংস্কার সংশোধনের ও আপনি সুযোগ পাবেন। পক্ষান্তরে শরীয়ত বিরোধী রীতিনীতি এবং দাবীর সামনে আপনি যতখানি নতি স্বীকার করবেন, ইসলামের বরকত ও কল্যাণকর হতে আপনার সমাজ ও পরিবেশে ঈমান ও নৈতিক দুর্বলতার একটি জঘন্য দৃষ্টান্তে পরিণত হবেন।

আপনার তৃতীয় কাজ এই যে, প্রচার ও সংশোধনমূলক কাজে সংসারের লোকজন, নিজের ভাই-বোন ও ঘনিষ্ট আত্মীয়-স্বজনের প্রতি আপনাদের সর্বপ্রথম ও সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা যে সমস্ত মহিলাকে সন্তান-সন্ততি দান করেছেন তাঁদের তো ইতিমধ্যেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দিয়েছেন। এখন তাঁরা যদি পাসের উপযোগী নম্বর লাভ না করেন, তবে অন্য কোনো জিনিসই তাঁদের ক্ষতিপূরণ করতে পারবে না; কাজেই তাঁদের নিকট সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষবস্ত হচ্ছে নিজেদের সন্তা-সন্ততি। এদেরকে দীন ও দীনি চরিত্র শিক্ষা দান করা আমাদের কর্তব্য। বিবাহিতা মহিলাদের আর একটি কর্তব্য হচ্ছে আপন স্বামীকে সৎপথ প্রদর্শন করা, স্বামী যদি সৎপথেই চলতে থাকেন, তবে এ ব্যাপারে তাঁকে যথাসাধ্য সাহায্য করা কর্তব্য। তাছাড়া একটি বালিকা আদব-কর্ম সম্পন্ন করার পর যতটুকু সময় আপনারা বাঁচাতে পারেন, তা অন্যান্য মহিলাদের নিকট দীনের দাওয়াত পৌঁছাবার কাজে ব্যয় করবেন। আপনারা ছোট ছোট বালিকা ও অশিক্ষিত বৃদ্ধাগণকে লেখাপড়া শিখান এবং শিক্ষিতা মহিলাগণকে ইসলামী সাহিত্য পড়তে দেন। মহিলাদের জন্য নিয়মিত বৈঠকের আয়োজন করে তাঁদেরকে দীনি শিক্ষার সুযোগ দিন। আপনাদের মধ্যে যদি কেউ বক্তৃতা করতে না পারেন তবে কোনো ভালো পুস্তকের অংশবিশেষ পাঠ করে শুনাবেন। মোটকথা যেভাবেই হোক না হোক কেন, নিজেদের সাধ্যশক্তি অনুসারে আপনারা কাজ করবেন এবং নিজ নিজ পরিচিত এলাকার মহিলাদের মধ্যে থেকে অজ্ঞতা কুসংস্কার দূর করার জন্য পুরোপুরি চেষ্টা করবেন। শিক্ষিত মহিলাদের উপর বর্তমান আরো একটি বিরাট দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। এক হিসেবে এ কাজটির গুরুত্ব অন্যান্য সকল কাজের তুলনায় অনেক বেশী। তা এই যে, বর্তমান পাশ্চাত্য ভাবাপন্ন মহিলারা যেভাবে এ দেশের সাধারণ মহিলা সমাজকে গুমরাহী, নিজ্র্জলতা এবং মানসিক ও নৈতিক উচ্ছৃংখলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং এ উদ্দেশ্যে তারা যেভাবে সরকারী উপায়-উপাদান ও সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার করে মুসলমান মহিলা সমাজকে ভ্রান্ত পথে টেনে নিচ্ছেসমগ্র শক্তি দিয়ে এর প্রতিরোধ করা।

একাজটি শুধূ পুরুষদের একক প্রচেষ্টায় সম্পন্ন হতে পারে না। কারণ, পুরুষরা যখন এ গুমরাহীর প্রতিবাদ করে, তখন নারী সমাজাকে এই বলে বিভ্রান্ত করা হয় যে, এরা তোমাদেরকে শুধু দাসী বানিয়ে রাখতে চায়। চিরকাল এর ইচ্ছা পোষণ করে আসছে যে, নারী সমাজ চার বেড়ার মধ্যে আবদ্ধ থেকে তিলে তিলে মৃত্যুবরণ করুক। এ আযাদীর হাওয়া যেন তাদেরকে আদৌ স্পর্শ করতে না পারে। কাজেই এ বিপদকে দূর করার জন্য মহিলা সমাজের সক্রিয় সহযোগিতা লাভ করা আমাদের একান্ত আবশ্যক। আল্লাহর ফযলে আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষিতা ভদ্র ও আল্লাহ ভীরু মহিলাদের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। তাঁরা আপওয়া মার্কা বেগমদের দাঁতাভাংগা জবাব দেয়া তাদের কর্তব্য। তাদেরকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া উচিত যে, মুসলমান মহিলা সমাজ আল্লাহ তাআলার বিধি-নিষেধের সীমালংঘন করে যে তরক্কী ও প্রগতি লাভ করতে হবে তার প্রতি লানত-শত ধিক্কার, একথা তাদের দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করা উচিত। শুধু এটাই নয়, যেসব বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য আল্লাহ ও রাসূলের বিধি-নিষেধ লংঘন করা আবশ্যক বলে প্রচার করা হচ্ছে, ইসলামী সীমারেখার মধ্যে অবস্থান করে সংঘবদ্ধভাবে এর সমাধান করেও তাদের দেখানো উচিত। এরূপ কাজের ফলে বিভ্রান্তকারী পুরুষ-নারীদের মুখ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।

— সমাপ্ত —-