সুন্নাতে রাসূলের আইনগত মর্যাদা

২৭. তিন তালাকের ব্যাপারে হযরত উমার (রা) এর  ফয়সালার স্বরূপ

অভিযোগ:“আপনি বলেছেন, আমি যেন কোন দৃষ্টান্ত পেশ করি যে, রসূলুল্লাহ (স) এর যুগের কোন সিদ্ধান্ত খুলাফায়ে রাশেদীন পরিবর্তন করেছেন, এটা তো আপনি ও অস্বীকার করতে পারবেন না যে, নবী (স) এর যুগে এক বৈঠকে প্রদত্ত তিন তালাককে এক তালাক করে তাকে রিজঈ (প্রত্যাহারযোগ্য) তালাক সাব্যস্ত করা হত। হযরত উমার (রা) তার শাসনামলে এটাকে তিন তালাক গণ্য করে মুগাল্লাযা তালাক সাব্যস্ত করেন এবং ফিকহ শাস্ত্রের আলোকে উম্মাত আজ পর্যন্ত এর উপরই আমল করে আসছে।

উত্তর:এ প্রসংগে সঠিক অবস্থা হলো, মহানবী (স)-এর যুগেও (একত্রে পদত্ত) তিন তালাককে তিন তালাকই মনে করা হত এবং বিভিন্ন স্থানে মহানবী (স) তাকে তিন তালাকই গণ্য করে ফয়সালা দিয়েছেন। কিন্তু যে ব্যক্তি তিনবার তালাক শব্দটি পৃথক পৃথকভাবে উচ্চারণ করত তার পক্ষ থেকে যদি এই ওজর পেশ করা হত যে, তার এক তালাকেরই নিয়াত ছিল এবং অবশিষ্ট দুইবার সে কেবল নিশ্চিত করার জন্য এই শব্দ ব্যবহার করেছে তাতে তার ওজর মহানবী (স) অনুমোদন করতেন।

হযরত উমার ফারূক (রা) তার যুগে যা কিছু করেছেন তা শুধু এই যে, লোকেরা যখন ব্যাপকভাবে তিন তালাক দিয়ে এক তালাকের ব্যাপারটি খেলায় পরিণত হতে যাচ্ছে, তাই আমি এই ওজর কবুল করব না এবং তিন তালাককে তিন তালাক হিসাবেই কার্যকর করব। এটাকে সাহাবীগণ ঐক্যবদ্ধভাবে মেনে নেন এবং পরবর্তী পর্যায়ে তাবিঈগণ ও মুজতাহিদ ইমামগণও এই সিদ্ধান্তের উপর একমত থাকেন। তাদের মধ্যে কেউই একথা বলেননি যে, হযরত উমার (রা) রিসালাত যুগের আইনের কোন পরিবর্তন করেছেন। কারণ নিয়াতের ওজর কবুল করাটা আইন নয়, বরং যে ব্যক্তি নিজের নিয়াতের কথা বলছে সে বিচারকের রায় অনুযায়ী সত্যবাদী কিনা তার উপর ওজর কবুল করার ব্যাপারটি নির্ভরশীল। মহানবী (স) এর যুগে মদীনার খুব স্বল্প সংখ্যক সাধারণ লোক এ ধরনের ওজর পেশ করেছিল। তাই মহানবী (স) তাদের সত্যবাদী মনে করে তাদের বক্তব্য গ্রহণ করেন। হযরত উমার (রা) -র  যুগে ইরান থেকে মিসরপর্যন্ত এবং ইয়ামেন থেকে সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তারিত রাজ্যের প্রতিটি ব্যক্তির এই ওজর আদালতে অপরিহার্যরূপে সমর্থনযোগ্য হতে পারত না। বিশেষত যখন বহু লোক একত্রে তিন তালক দিয়ে এক তালাকের নিয়াতের দাবী করা শুরু করে দিয়ে থাকবে।

২৮.  “মুআল্লাফাতুল কুলূব” সম্পর্কে হযরত উমার (রা) এর যুক্তির ধরন-প্রকৃতি

অভিযোগ: “রসূলুল্লাহ (স) এর যুগে মুআল্লাফাতুল-কুলূব (নও-মুসলিম, অথবা যে অমুসলিমের দৃষ্টি ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করা উদ্দেশ্য)-এর জন্য যাকাতের খাত থেকে সাহায্য দেয়া হত। হযরত উমার (রা) তার শাসনামলে এই সাহায্য বন্ধ করে দেন।”

উত্তর:এটাকে যদি কোন ব্যক্তি সিদ্ধান্তের মধ্যে রদবদলের দৃষ্টান্ত মনে করে তবে তার এই দাবী করা উচিত যে, শুধু মহানবী (স) এর সিদ্ধান্তই নয়, বরং আল্লাহর নিজের ফয়সালাসমূহের মধ্যেও ‘জাতির কেন্দ্রবিন্দু’ সাহেব রদবদল করতে পারে। কারণ যাকাতে মুআল্লাফাতুল-কুলূবের অংশ মহানবী (স) কোন হাদীসের মাধ্যমে নির্ধারণ করেননি, বরং আল্লাহ তাআলা স্বয়ং কুরআন মজীদে তা নির্ধারন করেছেন (দ্র.সূরা তওবা , ৬০ নং আয়াত)। নিমজ্জিত হওয়ার সময় খড়কুটার উপর ভর করার মত অবস্থা যদি হাদীছ অস্বীকারকারীদের না হয়ে থাকে এবং তারা যদি বিষয়টিতাৎপর্য অনুধাবন করতে চায়, তকে স্বয়ং “মুআল্লাফাতুল কুলূব” শব্দের উপর সামান্য চিন্তা করে তা বুঝতে পারে। পরিভাষাটি নিজেই নিজের অর্থ প্রকাশ করছে যে, যাদের মন জয় করা উদ্দেশ্য তাদেরকে খাত থেকে টাকাপয়সা দেয়া যেতে পারে। হযরত উমার (রা) এর যুক্তি এই ছিল যে, রসূলূল্লাহ (স) এর যুগে মুআল্লাফাতুল কুলুবের জন্য সম্পদ ব্যয় করা ইসলামী সরকারের প্রয়োজন ছিল। এজন্য  মহানবী (স) এই খাত থেকে লোকদের দান করতেন। এখন আমাদের রাষ্ট এতটা শক্তিশালী হয়ে গিয়েছে যে, উল্লেখিত উদ্দেশ্য কারো পেছনে অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন আমাদের নেই। অতএব আমরা এই খাতে কোন অর্থ ব্যয় করব না।

উপরোক্ত বিবরণ থেকে কি এই সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে যে, হযরত উমার (রা) মহানবী (স) এর যুগের কোন ফয়সালার পরিবর্তন করেছেন? বাস্তবিকই কি মহানবী (স) এর এমন কোন সিদ্ধান্ত ছিল যে, মন জয়ের প্রয়োজন হোক বা না হোক মোটকথা কিছু লোককে অবশ্যই মুআল্লাফাতুল-কুলূব সাব্যস্ত করা হবে এবং যাকাত থেকে তাদের জন্য সব সময় তাদের অংশ বের করতে হবে? স্বয়ং কুরআন মজীদে কি আল্লাহ তাআলাও এটা বাধ্যতামূলক করেছেন যে, যাকাতের সম্পদের একটি অংশ মুআল্লাফতুল-কুলূব খাতে সর্বাবস্থায় অবশ্যই খরচ করতে হবে?

২৯. বিজিত এলাকা সম্পর্কে হযরত উমার (রা)-র সিদ্ধান্ত কি মহানবী (স) এর সিদ্ধান্তের পরিপন্থী ছিল?

অভিযোগ: “নবী (স) এর যুগে বিজিত এলাকা মুজাহিদদের মধ্যে বন্টন করে দেয় হত। কিন্তু হযরত উমার (রা) তার যুগে এই ব্যবস্থার মূলোচ্ছেদ করেন।”

উত্তর: মহানবী (স) কখনও এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি যে, বিজিত এলাকা সবসময় সৈনিকদের মধ্যে বন্টন করে দিতে হবে। তিনি যদি এরূপ কোন ফয়সালা দিয়ে থাকতেন এবং হযরত উমার (রা) তার বিপারীত কাজ করে থাকতেন তবে আপনি বলতে পারতেন যে, তিনি মহানবী (স) এর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। অথবা মহানবী (স) তার সময়ে মুজাহিদদের মধ্যে যেসব জমি বন্টন করে দিয়েছিলেন হযরত উমার (রা) যদি তা তাদের নিকট থেকে ফেরত নিয়ে থাকতেন তবে এই অবস্থায় উপরোক্ত দাবী করা যেত। কিন্তু এই দুই অবস্থার কোনটিই ঘটেনি। আসল ব্যাপার এই যে, বিজিত এলাকা মুজাহিদগণের মধ্যে অপরিহার্যরূপে বন্টন করে দেয়াটা মূলতই কোন ইসলামী আইন ছিল না। বিজিত ভূখন্ড সম্পর্কে মহানবী (স) প্রয়োজন মোতাবেক বিভিন্ন স্থানে বিবিন্নরূপ ফয়সালা দান করেছিলেন। বানূ নাদীর ,বানূ কুরায়যা, খায়বার, ফাদক, ওয়াদিল-কুরা, মক্কাও তায়েফের বিজিত ভুখন্ডসমূহের প্রতিটির বন্দবস্ত নববী যুগে পৃথক পৃথক পন্থায় দেয়া হয়েছিল এবং এমন কোন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়নি যে, ভবিষ্যতে এসব জমির বন্দবস্ত অপরিহার্যরূপে অমুক পন্থায় দেয়া হবে। তাই হযরত উমার (রা) নিজের যুগে সাহাবীদের সাথে পরামর্শক্রমে বিজিত জমির যেরূপ বন্দবস্তের ব্যবস্থা করেন তাকে মহানবী (স) এর সিদ্ধান্তের মধ্যে রদবদলের দৃষ্টান্ত সাব্যস্ত যেতে পারে না।

৩০. বেতন-ভাতা বন্টনের ব্যাপারে হযরত উমার (রা) এর সিদ্ধান্ত

অভিযোগ:রসূলুল্লাহ (স) লোকদের একই সমান বেতন-ভাতা নির্ধারণ করতেন। কিন্তু হযরত উমার (রা) তা সেবার পরিমাণ অনুযায়ী নির্ধারণ করে মহানবী (স)-এর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। এটি এবং এরূপ আরও কয়েকটি দৃষ্টান্ত পরিবর্তন করেন। এটি এবং এরূপ আরও কয়েকটি দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় যা থেকে পরিষ্কার জানা যায় যে, খুলাফায়ে রাশেদীনের আমালে অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে মহানবী (স)-এর সিদ্ধান্তসমূহে সংশোধনী আনয়ন করা হয়েছিল।

উত্তর:মহানবী (স) যে সকল কর্মচারীকে একই সমান বেতন-ভাতা দিতেন, একথার কি প্রমাণ আছে?ইতিহাসের আলোকে তো দেখা যায়, এটা হযরত আবু বাকর (রা) এর কাজ ছিল। তাই এটাকে যদি কোন জিনিসের উদাহরণ সাব্যস্ত করা যায় তবে তা এই যে, একজন খলীফা তার পূর্ববর্তী খলীফার সিদ্ধান্তসমূহে সংশোধনী আনয়নের অধিকার রাখেন।

আমার আরজ এই যে, হাদীস অস্বীকারকারীগণ সম্মিলিতভাবে এই ধরনের দৃষ্টান্তসমূহ একটি পূর্ণাংগ তালিকা প্রণয়ন করে পেশ করুন। আমি ইনশাআল্লাহ প্রমাণ করব যে, তার মধ্যে একটি উদাহরণও খিলাফাতে রাশেদার যুগে মহানবী (স) এর সিদ্ধান্তসমূহ রদবদল করার দৃষ্টান্ত নয়।

৩১. কুরআন  মজীদের অর্থনৈতিক বিধানসমূহ কি ততকালীন যুগের জন্য ছিল?

অভিযোগ:“আপনি আমার একথা নিয়েও বিদ্রুপ করছেন যে, কুরআনের যেসব বিধান কোন শর্তের অধীনে কার্যকর হয় তা শর্তের অনুপস্থিতিতে মূলতবী থাকবে, যতক্ষণ না পুনশ্চ অনুরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এগুলোকে সমসাময়িক যুগের বিধান হিসাবে ব্যাখ্যা  করা হয়েছে। যাকাতের খাত থেকে “মুআল্লাফাতুল-কুলূব”দের সাহায্য প্রদানের নির্দেশ কুরআন মজীদে বিদ্যমান রয়েছে। হযরত উমার (রা) এই খাতকে এই বলে বন্ধ করে দেন যে, রাষ্টের যতক্ষণ পর্যন্ত এই খাতে ব্যয়ের প্রয়োজন ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত এই হুকুম কার্যকর ছিল। এখন সেই প্রয়োজন আর অবশিষ্ট নেই। যেসব লোক কুরআনের এজাতীয় বিধানকে “সমসাময়িক কালের বিধান বলে তাদের উদ্দেশ্যও তাই”।

উত্তর:এই নৈপুণ্যতায় মূলত উদ্দেশ্য হাসিল হবে না। হাদীস অস্বীকারকারীগণ ব্যক্তিগত মালিকানা সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে কমিউনিষ্টদের দৃষ্টিভংগী গ্রহণ করেছে। তারা এর নামকরণ করেছে “কুরআনের প্রতিপালন ব্যবস্থা”। এ সম্পর্কে যখন যখন তাদের বলা হয় যে, কুরআন মজীদে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে যত বিধিবিধান এসেছে, সরাসরি অথবা আকারে ইংগীতে তা উচ্ছেদ করার লক্ষ্য ব্যক্ত করে। তখন তারা উত্তর দেয় যে, এসব বিধান ছিল সমসাময়িক কালের জন্য। অন্য কাথায় যখনই এই কালটি অতিক্রান্ত হয়ে যাবে এবং এসব লোকের মনগড়া “খোদায়ী প্রতিপালন ব্যবস্থা” কায়েম হবে তখন উক্ত বিধানসমূহ রহিত হয়ে যাবে। জনাব পাভেজ সাহেব পরিষ্কার বাক্য বলেছেনঃ

“(প্রশ্ন করা হয়ে থাকে), কুরআনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যদি এই প্রকৃতির হয়ে থাকে, তবে এরপরও তা যাকাত, দান-খয়রাত, উত্তরাধিকার ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কিত বিধিবিধান কেন দিল? এর কারণ এই যে, কুরআন এই ব্যবস্থাকে একই সাথে নিয়ে আসতে চায় না, ক্রমান্বয়ে কায়েম করতে চায়। অতএব যাকাত, দান-খয়রাত, উত্তরাধিকার ইত্যাদি সম্পর্কিত বিধানসমূহ সেই সমসাময়িক কালের সাতে সংশ্লিষ্ট ছিল যেখানে তখনও এই ব্যবস্থা তার সর্বশেষ কাঠামোতে কায়েম হয়নি (দ্র. আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রদত্ত প্রবন্ধ ‘ইসলামী ব্যবস্থায় অর্থনীতি’)।

কিন্তু এসব লোক কুরআনের কোথাও দেখাতে সক্ষম হয়নি যে, আল্লাহ তাআলা তাদের এই মনগড়া “খোদায়ী ব্যবস্থা”-র বিধান দিয়েছেন এবং একথা বলেছেন যে, আমাদের আসল উদ্দেশ্য তো এই “খোদায়ী ব্যবস্থা”-র প্রতিষ্ঠা, অবশ্য এই ব্যবস্থা যতক্ষণ প্রতিষ্ঠিত না হবে ততক্ষণের জন্য আমরা যাকাত, দান-খয়রাত, উত্তরাধিকার ইত্যাদি বিধিবিধান পালনের নির্দেশ দান করেছি। এই সব কিছুই তাদের স্বকপোলকল্পিত এবং এর পরিবর্তে তারা কুরআনের সুস্পষ্ট ও চুড়ান্ত বিধিবিধানসমূহকে সাময়িক কালের বিধান মনে করে তা উড়িয়ে দিতে চায়। হযরত উমার (রা) মুআলাফাতুল-কুলূব সম্পর্কেযে কথা বলেছিলেন তার সাথে শেষ  পর্যন্ত এদের উপরোক্ত বিষয়ের কি সম্পর্কআছে? এর উদ্দেশ্য তো এই ছিল যে, মন জয়ের জন্য যতদিন যাচ্ছিলাম, এখন এখাতে অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন নাই, তাই এখন আমরা তাদেরকে অর্থ সাহায্য দেব না। এটা সম্পূর্ণতকুরআন মজীদে ফকীর-মিসকীনদের যাকাত দেয়ার যে হুকুম দেয়া হয়েছে তদ্রপ্ এই হুকুম অনুযায়ী কোন ব্যক্তি যতক্ষণ ফকীর বা মিসকীন থাকবে ততক্ষণ আমরা তাকে যাকাত দেব তার এই অবস্থার পরিবর্তন হলে আমরা তাকে যাকাত দেয়া বন্ধ করে দেব। এ কথার সাথে পারভেয সাহেবের “সমসাময়িক কল”-এর মতবাদের দূরতম সম্পর্কও নেই।

৩২. “সমসাময়িক কালের” ভুল ব্যাখ্যা

অভিযোগ: “পরিস্থিতি অনুকূল না হওয়া পর্যন্ত যে শরীআতের কোন  ‍চুড়ান্ত সিদ্ধান্তও মূলতবী রাখা যায়, আপনি নিজেও একথা স্বীকার করেন। যেমন পাকিস্তানের আইন সম্পর্কে আপনি বলেছিলেন, “একটি ইসলামী রাষ্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালনায় অমুসলিদের অংশগ্রহণ শরীআত ও বুদ্ধিবৃত্তি উভয় দিক থেকেই সঠিক নয়। কিন্তু একটি সাময়িক বন্দবস্ত হিসাবে আমরা জায়েয ও যুক্তিসংগত মনে করি যে, দেশের গণপরিষদে তাদের প্রতিনিধিত্ব দেয়া যেতে পারে” (তরজমানুল কুরআন, সেপ্টেম্বর ১৯৫২ খৃ.পৃদ ৪৩০-১)।

উত্তর:এ বিষয়টিও হাদিস অস্বীকারকারীদের দৃষ্টিভংগী ও মতবাদ থেকে সম্পূর্ন ভিন্নতর। অমুসলিমদের সম্পর্কে তো আমাদের নিশ্চিতভাবে জানা আছে যে, ইসলাম তার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালনার দায়িত্বে তাদের শরীক করে না। তাই এই পলিসি কার্যকর করা আমাদের দায়িত্ব এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা তা কার্যকর করতে সক্ষম হব না ততক্ষণ আমরা বাধ্য হয়ে যা কিছুই করব তা একটি সাময়িক ব্যবস্থা হিসাবে করব। পক্ষান্তরে হাদীস অস্বীকারকারীগণ স্বয়ং একটি “খোদায়ী ব্যবস্থা” রচনা করে, যে সম্পর্কে কুরআনের একটি প্রামাণ্য হুকুমও তারা দেখাতে পারবে না এবং ব্যক্তিগত মালিকানা প্রমাণের পক্ষে যে পরিষ্কার ও চুড়ান্ত বিধান কুরআন মজীদে রয়েছে তাকে তারা সাময়িক কালের বিধান মনে করে। এ দুটি কথার মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান রয়েছে।

আমাদের মতে “সাময়িক কালের” সংজ্ঞা এই যে, কুরআন মজীদের কোন বিধান অথবা কুরআন প্রদত্ত কোন পন্থা বা মূলনীতি অনুযায়ী আমল করার ক্ষেত্রে যদি কিছু প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান থাকে তবে তা দূরীভূত না হওয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে আমরা যা কিছুই করব, তা হবে সাময়িক কালের ব্যবস্থা। পক্ষান্তরে হাদীস অস্বীকারকারীদের মতে তাদের নিজস্ব মনগড়া নীতিমালার উপর আমল করার জন্য যতক্ষণ পর্যন্ত পরিবেশ অনুকুল না হবে ততক্ষণ তারা কুরআন প্রদত্ত বিধিবিধানও নীতিমালার উপর কেবলমাত্র একটি সাময়িক ব্যবস্থা হিসাবে আমল করবে।

৩৩. মহানবী (স) কি শুধুমাত্র কুরআনের ভাষ্যকার না আইন প্রণেতাও?

অভিযোগ:“এই প্রশ্নটিও সামনে এসেছিল যে, সুন্নাত কি শুধুমাত্র কুরআনিক বিধান ও নীতিমালার ভাষ্য না কি তা কুরআনিক বিধানের তালিকা বর্ধিতও করে? সঠিক কথা এই যে, কুরআন যেসব বিষয়ে মৌল নির্দেশ দিয়েছে, সুন্নাত তার আনুষংগিক বিষয় নির্ধারণ করে। এটা নয় যে, কুরআন কিছু বিধান প্রবর্তন করল এবং সেই তালিকায় সুন্নাত আরো কিছু বিধান যোগ করল। অবস্থা যদি তাই হত তবে কুরআনিক বিধান যে তালিকা দিয়েছে তা অসম্পূর্ণ ছিল এবং সুন্নাত অতিরিক্ত কিছু যোগ করে তালিকার পূর্ণতা সাধন করে দিয়েছে। কিন্তু আপনি যেখানে এক স্থানে প্রথম অবস্থা বর্ণনা করেছেন, সেখানে অন্যত্র দ্বিতীয় অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন। অথচ এই দুটি কথা পরস্পর বিরোধী।

আপনি সাধারণ জ্ঞান সম্পন্ন লোকদের নিকটও জিজ্ঞেস করে দেখুন (আপনার বক্তব্য অনুযায়ী) রসূলুল্লাহ (স) এর বণী: “ফুফু-ভাইঝি এবং খালা-ভাগ্নীকে একত্রে বিবাহ করাও হারাম” তা কি কুরআনিক বিধান (অর্থাৎ দুই বোন  একত্রে বিবাহ করা হারাম) এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ না মুহরিমাতের কুরআন প্রদত্ত তালিকায় সংযোজন? প্রত্যেক বিবেকবান ব্যক্তি (তবে শর্ত হচ্ছে সে যদি আপনার মত একগুয়ে না হয় অথবা নির্বোধের মত আচরণ না করে) বলবে যে, তা কুরআনিক তালিকায় সংযোজন। এই আলোচনা থেকে যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে আসে তা এই যে, আল্লাহ তাআলা যেখানে কুরআনিক তালিকায় ফুফু, খালা, বোনঝি, দুধমাতা দুধবোন, স্ত্রীর মা (শাশুড়ি), পুত্রদের স্ত্রীগণ এমনকি পালিত কন্যাদের পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন এবং এও বলে দিয়েছেন যে, দুই বোন একত্রে বিবাহ করা যাবে না, সেখানে কি আল্লাহ তাআলা একথাটুকু বলতে পারলেন না (মাআযাল্লাহ) যে, ফুফু-ভাইঝি ও খালা বোনঝিকে একত্রে বিবাহ করা যাবে না?”

উত্তর:উপরোক্ত গোটা আলোচনার জবাব এই যে, রসূলুল্লাহ (স) কুরআনের ভাষ্যকারও ছিলেন এবং আল্লাহ তাআলার নিয়োগকৃত আইনপ্রণেতাও। তার এই দায়িত্বও ছিল যে,  (মানব জাতির জন্য নাযিলকৃত আল্লাহর বিধানের তিনি ব্যাখ্যা করে দেবেন) এবং এই দায়িত্ব ছিল যে- (তিনি লোকদের জন্য পাক জিনিসসমূহ হালাল করেন এবং নাপাক জিনিসসমূহ তাদের জন্য হারাম করেন)। অতএব মহানবী (স) যেরুপ কুরআনিক বিধানের ব্যাখ্যা প্রদানের অধিকারী ছিলেন এবং তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দলীল হিসাবে গন্য, তেমনিভাবে তিনি আইন প্রণয়নের কর্তৃত্ব প্রাপ্ত ছিলেন এবং তার প্রদত্ত বিধান দলীল হিসাবে গন্য। এই দুটি কথার মধ্যে চূড়ান্ত ভাবেই কোন বিরোধ নেই। এখন থাকল ফুফু ও খালার প্রসংগ। হাদীস প্রত্যাখ্যানকারীরা যদি বক্র বিতর্কের রোগে আক্রান্ত না হত তবে সহজেই তাদের বুঝে  একথা আসতে পারত যে, কুরআন মজীদ যখন কোন মহিলাকে তার বোনের সাথে একত্রে বিবাহ করতে নিষেধ করেছে তখন তার উদ্দেশ্য হচ্ছে, দুই বোনের মধ্যে যে সহজাত ভালবাসার সম্পর্ক রয়েছে এবং থাকা উচিত তার হেফাজত করা। মহানবী (স) বলেছেন যে, এই একই কারণ পিতার বোন এবং মায়ের বোনের ক্ষেত্রেও বিদ্যমান। অতএব ফুফু ও ভাইঝি এবং খালা ও বোনঝিকে একত্রে বিবাহ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এটা চাই কুরআনের ব্যাখ্যাই হোক, অথবা কুরআন থেকে নির্গত বিধান (ইসতিম্বাত) হোক অথবা রসূল প্রদত্ত বিধানই হোক মোটকথা আল্লাহর রসূলের হুকুম এবং ইসলামের সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত গোটা উম্মাত ঐক্যবদ্ধভাবে তাকে বিধান হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। খারিজীদের একটি উপদল ব্যতীত কেউই এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেনি। আর ঐ উপদলটির যুক্তি ও ঠিক তাই ছিল যা আজ হাদীস প্রত্যাখ্যানকারীরা পেশ করে থাকে যে, এই হুকুম যেহেতু কুরআন মজীদে নাই, অতএব আমরা তা মানব না।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি ডকটর সাহেব এই প্রসংগে উত্থাপন করেছেন তা সবই স্বল্প জ্ঞান ও স্বল্প ধীশক্তির ফল। শরীআতের গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি সমূহরে মধ্যে এও একটি যে, কোন একটি বিষয়ে যে জিনিসটি মূল নির্দেশের উদ্দেশ্য (ইল্লাত) ইে একই উদ্দেশ্য যদি অন্য বিষয়েও পাওয়া যায় তবে তার উপরও একইি হুকুম বলবত হবে। উদাহরনস্বরুপ কুরআন মজীদের শুধুমাত্র শরাবপান হারাম করা হয়েছিল। মহানবী (স) বলেন যে, এ প্রসংগে নিষিদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দানের উদ্দেশ্য নেশাগ্রস্ত হওয়া তাই যে কোন নেশাউদ্রেককারী জিনিস হারাম। এখন কেবলমাত্র স্বল্প জ্ঞান সম্পন্ন নির্বোধ ব্যক্তিই এই প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে যে, আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্য যদি তাই ছিল তবে তিনি কি কুরআন মজীদে ভাং,চরস, তাড়ি ইত্যাদি সকল প্রকার মাদক দ্রব্যের একটি তালিকা দিতে পারতেন না?

৩৪. রসূলুল্লাহ (স) এর অন্তরদৃষ্টি আল্লাহ প্রদত্তত হওয়ার তাৎপর্য

অভিযোগ:“গোটা আরৈাচনার কেন্দ্রবিন্দু এই প্রশ্ন যে, রসূলুল্লাহ (স) এর উপর যি ওহী নাযিল হত তার সবটাই কি কুরআন মজীদে সংকলিত হয়েছে, নাকি কুরআনে ওহীর একটি অংশ প্রবেশ করেছে এবং অপর অংশ সন্নিবেশিত হয়নি? এক্ষেত্রে আপনার উত্তর হলো, ওহীর দুইটি (বরং কয়েকটি) বিভাগ ছিল। তার মধ্যে কেবলমাত্র এক প্রকারের ওহী কুরআনে সন্নিবেশিত হয়েছে, অবশিষ্ট প্রকারের ওহীগুলো কুরআনে সন্নিবেশিত হয়নি। আমি আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, আপনি তাফহীমাত গ্রন্থের ১ম খন্ডে লিখেছেন:

“এত সন্দেহ নেই যে, কুরআনই হচ্ছে মৌলিক বিধান। কিন্তু এই বিধান আমদের নিকট কোন মাধ্যম ব্যতীত পাঠানো হয়নি, বরং রসূলে খোদা (স) এর মধ্যস্থতায় প্রেরণ করা হয়েছে। আর রসূলূল্লাহ (স)  এজন্য মাধ্যম বানানো হয়েছে যে তিনি মৌলিক বিধানগুলো নিজের ও নিজের উম্মাতের জীবনে বাস্তবায়ন করে একটি নমুনা পেশ করবেন এবং নিজের খোদা প্রদত্ত অন্তর্দৃষ্টির সাহায্যে আমাদের জন্য সেই পন্থা নির্ধারণ করে দেবেন যেভাবে এই মৌলিক বিধানগুলো  আমাদের সামষ্টিক ও ব্যক্তিগত জীবনের আচার-ব্যবহার কার্যকর করা উচিত”(পৃ.২৩৭)।১

ওহীর বৈশিষ্ট্য এবং যেই বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বলা হয় তা এই যে, যার নিকট এই ওহী প্রেরণ করা হয় তার অন্তরদৃষ্টি কোন দখল এর মধ্যে থাকে না। যে ‘ওহীর’ আলোকে রসূলুল্লাহ (স) কুরআনের মৌল বিধান কার্যকর করার পন্থা নির্ধারণ করেছিলেন তাও যদি বাস্তবিকই আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত হত তার মধ্যে রসূলুল্লা (স) এর অন্তরদৃষ্টির কোন হস্তক্ষেপ হতে পারত না। আর নবী (স) যদি নিজের অন্তরদৃষ্টি সাহায্যে তা নির্ধারণ করতেন তবে তা ওহী হত না। রসূলের অন্তরদৃষ্টি যতই উচ্চ ও উন্নত হোক না কেন তা আল্লাহর ওহী হতে পারে না।

সম্ভবত আপনি বলবেন যে, আমি “খোদা প্রদত্ত অন্তরদৃষ্টি” বলেছি। আর মানবীয় অন্তরদৃষ্টি ও খোদা প্রদত্ত অন্তরদৃষ্টির মধ্যে বিরাট ব্যবধান রয়েছে। আপনার জবাব যদি তাই হয় তবে আমি জিজ্ঞেস করতে চাই যে, আপনি যে দূরদৃষ্টি ও অন্তরদৃষ্টি লাভ করেছেন তা কি আল্লাহ প্রদত্ত নাকি অপর কেউ দান করেছে? প্রত্যেক মানবীয় অন্তরদৃষ্টি আল্লাহ প্রদত্তই হয়ে থাকে”।

উত্তর:এখানে ডকটর সাহেব ‘ওহী’ শব্দের অর্থ অনুধাবনে পুনরায় একই ভুল করেছেন, যে সম্পর্কে আমি আমার সর্বশেষ চিঠিতে তাকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম (দ্র. “ওহী বলতে কি বুঝায়” শীর্ষক অনুচ্ছেদ)। হাদীস প্রত্যাখ্যানকারীদের অতুলনীয় গুণাবলীর মধ্যে এও একটি উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য যে, আপনি যদি তাদের একটি ভ্রান্তি যুক্তির মাধ্যমে দশবারও ভ্রান্ত প্রমাণ করে দেন তারপরও তারা নিজেদের কথার পুনরাবৃত্তি করতে থাকবে এবং আপনার কথার প্রতি মোটেও ভ্রক্ষেপ করবে না।

“আল্লাহ প্রদত্ত দূরদৃষ্টি বা অন্তদৃষ্টি” দ্বারা আমি কোন জন্মগত গুন বুঝাতে চাইনি, যেমন প্রত্যেক ব্যক্তিই জন্মগত ভাবে কোন না কোন গুণের অধিকরী হয়ে থাকে। বরং নবুওয়াতের দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা রসূলুল্লাহ (স) কে নবূওয়াতের সাথে সাথে যে অন্তরদৃষ্টি ও দূরদৃষ্টি দান করেছেলেন, এখানে তাই বুঝানো হয়েছে, যার ভিত্তিতে তিনি কুরআনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের গভীর পর্যন্ত পৌছে যেতেন যে পর্যন্ত কোন অ-নবীর পক্ষে পৌছা সম্ভব ছিল না এবং যার আলোকে তিনি নিজে ইসলামের সঠিক পথে চলতেন আর অন্যদের জন্যও পথের দিশা বলে দিতেন। এই অন্তরদৃষ্টি ও দূরদৃষ্টি নবুওয়াতের অপরিহার্য উপাদান ছিল যা কিতাবের সাথে সাথে মহানবী (স) কে দান করা হয়েছিল যাতে তিনি কিতাবের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বলে দিতে পারেন এবং জীবনের আচার-আচরণে লোকদের পথ প্রদর্শনও করতে পারেন। এই অন্তরদৃষ্টি ও দূরদৃষ্টির সাথে শেষ পর্যন্ত অ-নবীদের দূরদৃষ্টি ও অন্তরদৃষ্টির কি তুলনা হতে পারে?

অ-নবী আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দূরদৃষ্টিই প্রাপ্ত হোক-চাই তা আইনগত দূরদৃষ্টি হোক, অথবা চিকিৎসা বিষয়ক দূরদৃষ্টি হোক, অথবা কারিগরি ও প্রকৌশলগত অথবা অন্য কোন বিষয়ের উপর দূরদৃষ্টি হোক-তা স্বীয় বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে সেই জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলো থেকে, সেটই পরিপূর্ণ তীক্ষ্নবুদ্ধি ও বোধশক্তি থেকে সম্পূর্ণ পৃথক-যা নবীকে নবুওয়াতের দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়ার জন্য দান করা হয়ে থাকে। প্রথম প্রকারের জিনিসটি যতই উচ্চ ও উন্নত পার্যায়েরই হোক, তা অবশ্যই কোন নিশ্চিত জ্ঞানমাধ্যম (Source)  নয়। কারণ এই দূরদৃষ্টির সাহায্যে একজন অ-নবী যে সিদ্ধান্তে পৌছে ততসম্পর্কে সে চুড়ান্তভাবে জানে না যে, এই সিদ্ধন্তে পৌছে ততসম্পর্কে সে চূড়ান্তভাবে জানে না যে, এই সিদ্ধান্ত কি আল্লাহর পথনির্দেশে প্রাপ্ত হচ্ছে না নিজের ব্যক্তিগত চিন্তা-গবেষণার সাহায্যে। পক্ষান্তরে নবীর উপর অবতীর্ণ কিতাব যেরূপ নিশ্চিত জ্ঞানের উৎস, এই দ্বিতীয় জিনিসটি ঠিক তদ্রুপ নিশ্চিত জ্ঞানের উৎস। কারণ একজন নবী পূর্ণ সচেতনতার সাথে জানতে পারেন যে, এই পথপ্রদর্শন আল্লার পক্ষ থেকে হচ্ছে।

কিন্তু হাদীস প্রত্যাখ্যানকারীদের নবীর সত্তার সাথে যে চরম শত্রুতা রয়েছে তার কারণে নবীর প্রতিটি মহত্ত ও মর্যাদাকে তারা পদদলিত করছে। তারা প্রাণান্তকর চেষ্টারমাধ্যমে প্রমাণ করতে চাচ্ছে যে, নবী ও সাধারণ জ্ঞানবান ব্যক্তিদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যদি তার কোন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থেকেও থাকে তবে তা এতটুকু যে, আল্লাহ তাআলা নিজের ডাক বান্দাদের পর্যন্ত পৌছে দেয়ার জন্য তাকে রানার ডাক হরকরা নিযুক্ত করেছিলেন।

ক্সএর পরের বাক্যাংশ যা ডকটর সাহেব বর্জন করেছেন তা এই যে, “অতএব কুরআনের আলোকে সঠিক পদ্ধতি হলো: প্রথমে আল্লাহ প্রদত্ত মৌলিক বিধানসমূহ অতপর আল্লাহর রসূল প্রদত্ত পন্থা, অতপর উভয়টির আলোকে আমাদের কর্তৃত্ব সুম্পন্ন  ব্যক্তিগণের ইজতিহাদ:

“আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে কর্তৃত্বসম্পন্ন লোকদেরও” (সূরা নিসা: ৫৯)।

৩৫. কুরআনের আলোকে ওহীর শ্রেণীবিভাগ

অভিযোগ: “আপনি আল্লাহ প্রদত্ত ওহীর বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ প্রমাণের জন্য সূরা আশ-শরারা ৫১ নং আয়াত পেশ করেছেন। তার অনুবাদ আপনি এভাবে করেছেন:

“কোন মানুষের মর্যাদা এই নয় যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যমে ব্যতিরেকে, অথবা পর্দার অন্তরাল থেকে অথবা এভাবে যে, একজন দূত প্রেরণ করবেন এবং সে আল্লাহর অনুমতিক্রমে ওহী করবে যা কিছু আল্লাহ চান। তিনি মহান ও প্রজ্ঞাময়।”

প্রথমত, আপনি (কুরআনের উপর আমার দূরদৃষ্টি অনুযায়ী) এই আয়াতের শেষাংশের অর্থই বুঝেননি। আমি এ আয়াত থেকে এই বুঝেছি যে, এখানে আল্লাহ তাআলা শুধুমাত্র নবী-রসূলগণের সাথে বাক্যলাপের পন্তাগুলো সম্পর্কে বর্ণনা দিচ্ছেন না, বরং এখানে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে তার বাক্যলাপের পন্থা কি। প্রকাশ থাকে যে, মানুষ দুই প্রকারের। এক, নবী-রসূলগণ এবং দুই, অ-নবী মানুষ। অত্র আয়াতের প্রথম দুই অংশে আম্বিয়ায়ে কিরামের সাথে বাক্যলাপ করার দুটি পন্থার উল্লেখ রয়েছে। একটি পন্থাকে ওহী শব্দের দ্বারা বুঝানো হয়েছে-যার অর্থ হচ্ছে নবীর অন্তরে ওহীর অবতরণ যা হযরত জিবরীল (আ) এর মধ্যস্থতায় হত। আর দ্বিতীয় পন্থা ছিল সরাসরি আল্লাহর বাক্যধ্বনি-যা পর্দার অন্তরাল থেকে শুনিয়ে দেয়া হত এবং এর বিশেষ উল্লখ পাওয়া যায় হযরত মূসা (আ) এর আলোচন্য়া। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে পরিষ্কার উল্লেখ আছে:وكلم الله موسى تكليما .। অন্যত্র আছে যে, হযরত মূসা (আ) আকাংখা ব্যক্ত করেন, যে মহান সত্তা আমার সাথে পর্দার অন্তরাল থেকে কথা বলেন আমি তাকে উন্মুক্ত অবস্থায় দেখতে চাই। এই অংশের “আম্বিয়ায় কেরাম স্বপ্নের মাধ্যমে ওহী প্রাপ্ত হতেন” এরূপ অর্থ করা কোন ক্রমেই সঠিক হতে পারে না। আয়াতের তৃতীয় অংশে বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষের সাথে আল্লাহ পাকের বাক্যলাপ করার পন্থা এই যে, তিনি তাদের নিকট রসূল প্রেরণ করেন। এই রসূলের নিকট আল্লাহ ওহী পাঠান এবং রসূল এই ওহী সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দেন। অন্য কথায়, আমরা যখন কুরআন মজীদ পাঠ করি তখন আল্লাহ যেন আমাদের সাথে বাক্যালাপ করছেন।”

উত্তর:কুরআন সম্পর্কে এখানে দূরদৃষ্টির যে নমুনাপেশ করা হয়েছে তার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ জানার জন্য খুব দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কুরআন মজীদের সূরা শূরার ৫ম রুকূ বের করে দেখে নিন। ডকটর সাহেব যে আয়াতের উপরোক্ত অর্থ বর্ণনা করেছেন ঠিক তার পরের আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন:

“এবং এভাবে (হে নবী) আমরা আমাদের নির্দেশের একটি রূহ তোমার দিকে ওহী পাঠিয়েছি। তুমি কিছুই জানতে না কিতাব কাকে বলে, ঈমান কি জিনিস। কিন্তু আমরা সেই রূহকে একটি আলো বানিয়ে দিয়েছি, যার সাহায্যে আমরা বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথ দেখাই। আর নিশ্চিত তুমি সঠিক-সোজা দিকে পথ দেখাচ্ছ”-(আয়াত: ৫২)।

এ থেকে পরিষ্কার জানা যাচ্ছে যে, পূর্বোক্ত আয়াতের কোন অংশই সাধারণ মানুষ পর্যন্ত আল্লাহর বাণী পৌছানোর পন্থা বর্ণনা করছে না, বরং তাতে শুধুমাত্র আল্লাহ তার নবীর নিকট যে পন্থায় তার বাণী পৌছান তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে।আল্লাহর বিধানসমূহ পৌছার যে তিনটি পন্থাল কথা তাতে উল্লেখিত হয়েছে সেদিকেই এ আয়াতে (আর এভাবে) শব্দটি ইংগীত করেছে। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা রসূলুল্লাহ (স) কে বলছেন, উপরোক্ত তিনটি পন্থায় আমরা আমাদের নির্দেশের একটি রূহ তোমার প্রতি ওহী করেছি। অর্থ ‘জিবরীল আমীন’ গ্রহণ করা যায় না, কারণ যদি তাই বুঝানো হত হবে বলার পরিবর্তে      …..বলা হত। এজন্য “নির্দেশের রূহ” অর্থ সেই সকল হেদায়াত যা উল্লেখিত তিনটি পন্থায় মহানবী (স) এর উপর ওহী করা হয়েছে। অতপর শেষের দুটি বাক্যাংশে ঘটনাবলীর পারস্পর্য এই বর্ণনা করা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের মধ্যে থেকে এক বান্দার পথ প্রদর্শন সেই আলোর দ্বারা করেছেন যা “নির্দেশের রূহ” এর আকারে তার নিকট পাঠানো হয়েছে এবং এখনও সেই বান্দা সিরাতে মুস্তাকীমের দিকে লোকদের পথপ্রদর্শন করছেন।

তথাপি যদি পূর্বাপর সম্পর্ক অগ্রাহ্য করে শুধুমাত্র ঐ একটি আয়াতের উপর দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত  করে নেয়া হয় যার ব্যাখ্যা ডকটর সাহেব প্রদান করেছেন তবুও তার সেই তাৎপর্য হতে পারে না,  যা তিনি তা থেকে বের করার চেষ্টা করেছেন। ঐ আয়াতের তৃতীয় অংশের তিনি এই ব্যাখ্যা করেছেন যে, আল্লাহ তাআলা সাধারন মানুষের নিকট রসূল প্রেরণ করেন, রসূলের নিকট আল্লাহ ওহী পাঠান এবং রসূল এই ওহী সাধারণ লোকদের নিকট পৌছে দেন। অথচ আয়াতের মূল পাঠ এই যে:

“অথবা তিনি একজন বার্তাবাহক পাঠান, অতপর সে তার নির্দেশ অনুযায়ী ওহী করে যা তিনি চান।”

উক্ত বাক্যাংশে “রসূল” শব্দের অর্থ যদি ফেরেশতা পরিবর্তে “মানুষ রসূল” করা হয় তবে তার অর্থ এই দাড়ায় যে, রসূল সাধারণত মানুষের উপর ওহী করেন। বাস্তবিকই কি সাধারণ মানুষের উপর আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ওহী করতেন? ওহী শব্দের অর্থই তো সূক্ষ্ম ইংগীত এবং গোপন বাক্যালাপ। আম্বিয়া আলাইহিমুস-সালাম আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে প্রকাশ্যে যে প্রচারকার্য করতেন তা বুঝানোর জন্যও আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এই শব্দটি ব্যবহার করা যেতে পারে না, আর কুরআনের কোথাও তা এই অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। এখানে তো ‘রসূল’ শব্দটি পরিষ্কারভাবে সেই ফেরেশতার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে যিনি আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের নিকট ওহী নিয়ে আসতেন। তার বার্তা পৌছিয়ে দেয়ার কাজটিকে “ওহী করা” শব্দের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং করা যেতে পারে।

৩৬. ওহী গায়র মাতলূর উপর ঈমান আনয়ন রসূলের উপর ঈমানের অংশ

অভিযোগ:“আম্বিয়ায় কিরামের নিকট যে ওহী আসত তার শ্রেণীবিভাগ উল্লেখ কুরআনের কোথাও নেই। অথবা এ ধরনের কোন উল্লেখও কুরআনের কোথাও আসেনি যে, কুরআন শুধুমাত্র এক ধরনের ওহীর সমষ্টি এবং অবশিষ্ট শ্রেণীর ওহীসমূহ-যা রসূলুল্লাহ (স) কে দান করা হয়েছিল তা অন্য কোথাও সংকলিত আছে। পক্ষান্তরে রসূলুল্লাহ (স) এর জবানীতে স্বয়ং কুরআন মজীদে একথা বলানো হয়েছে যে …. আমার নিকট এই কুরআন ওহী করা হয়েছে।”-(সূরা আল-আনআম:১৯)।

কুরআনের কোন এক স্থানেও কি উল্লোখ আছে যে, আমার নিকট কুরআন ওহী করা হয়েছে এবং তা ছাড়া আরও ওহী পাওয়া গেছে যা কুরআনে উল্লেখ নাই? আসল কথা হচ্ছে আপনি ওহীর গুরুত্বই বুঝতে পারেননি। ওহীর উপর ঈমান আনয়ন করায় কোন ব্যক্তি মুমিন হতে পারে এবং ঈমান পূণাংগ ও পরিপূর্ণ ওহরি উপর ঈমান আনায়নের নাম। এই নয় যে, ওহীর এক অংশের উপর ঈমান আনা হবে এবং অপরাংশের উপর ঈমান আনা হবে না।”

উত্তর:“কুরআন ব্যতীতও মহানবী (স) এর উপর ওহীর মাধ্যমে বিধি বিধান নাযিল হত’’ শীর্ষক আলোচনা  সম্পর্কিত পত্রালাপে এই বিষয়ের প্রমাণ ইতিপূর্বে পেশ করা হয়েছে [“কুরআন ছাড়াও কি মহানবী (স) এর উপর আরও কোন ওহী আসত?” শীর্ষক অনুচ্ছেদ দ্র.]। এখন থাকল এই প্রশ্ন যে দ্বিতীয় প্রকারের ওহীর উপর ঈমান আনায়নের নির্দেশ কোথায় দেয়া হয়েছে? এর জওয়াব এই যে, এর উপর ঈমান আনা মূলত রিসালাতের উপর ঈমান আনার এক অপরিহার্য অংশ। আল্লাহ তাআলা তার কিতাব ছাড়াও তার রসূলের উপর ঈমান আনার যে নির্দেশ দিয়েছেন তা স্বয়ং দাবী করে যে, রসূল যে পথর্নিদেশ ও শিক্ষাই দান করেন তার উপর ও ঈমান  আনতে হবে। কারণ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত     “যে ব্যক্তি রসূলের আনুগত্য করল সে মূলত  আল্লাহর আনুগত্য করল”-সূরা নিসা: ৮০)। “তোমরা যদি তার আনুগত্য কর তেব সৎপথপ্রাপ্ত হবে”। (সূরা নূর: ৫৪)। এই নবীগণ সেইসব লোক যাদের আল্লাহ হেদায়াত দান করেছেন। অতএব তোমরা তাদের হেদায়াতের অনুসরণ কর”-(আল-আনআম:৯১)।

ডকটর  সাহেবের হয়ত জানা নাই যে, এমন অসংখ্য নবী অতিক্রান্ত হয়েছে যাদের উপর আদৌ কোন কিতাব নাযিল হয়নি। কিতাব তো কখনও নবী ছাড়া আসেনি, কিন্তু কিতাব ছাড়াও নবী এসেছেন। লোকেরা তাদের শিক্ষা ও পথনির্দেশের উপর ঈমান আনতে এবং তাদের অনুশীলন করতে ঠিক তদ্রুপ আদিষ্ট ছিল যেভাবে আল্লাহর কিতাবের উপর ঈমান আনতে এবং তা অনুসরণ করতে তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। স্বয়ং কিতাব আনয়নকারী নবীগণের উপর প্রথম দিন থেকেই ওহী মাতলূ (প্রত্যক্ষ ওহী) নাযিল হওয়া একান্ত জরূরী নয়। হযরত মূসা (আ) এর উপর তাওরাত কিতাব ঠিক তখন নাযিল শুরু হয় যখন তিনি ফিরাউনের ডুবে মরার পর বণী ইসরাঈলদের নিয়ে তুর পর্বতের পাদদেশে পৌছেন (সূরা আল-আরাফ: ১৩০-১৪৭নং আয়াত এবং আল-কাসাস: ৪০-৪৩ নং আয়াত দ্র.)। মিসরে অবস্থানকালে তার উপর কোন কিতাব নাযিল হয়নি। কিন্তু তা সত্তেও ফিরাউন এবং মিসরের প্রাতিটি অধিবাসী আল্লাহর পক্ষ থেকে তার পেশকৃত প্রতিটি কথার উপর ঈমান আনতে আদিষ্ট ছিল। এমনকি এসব কথার উপর ঈমান না আনার কারণে ফিরাউন স্বীয় সৈন্যবাহিনী সমেত শাস্তির শিকার হল।

হাদিস প্রত্যাখ্যানকারীরা যদি এই জিনিসটি মানতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে তবে আমি তাদের জিজ্ঞেস করতে চাই যে, কুরআনের বর্তমান ক্রমবিন্যাস আল্লাহর পক্ষ থেকে হওয়ার  উপর আপনারা ঈমান রাখেন কি না? কুরআনে স্বয়ং একথা পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, এই পবিত্র গ্রন্থ একই সময় একটি সুসংবদ্ধ গ্রন্থকারে নাযিল হয়নি, বরং তা বিভিন্ন সময়ে পর্যায়ক্রমে অল্প অল্প করে নাযিল করা হয়েছে (দ. সূরা বনী ইসরাঈল: ১০৬ নং আয়াত এবং আল- ফুরকান: ৩২ নং আয়াত)। অপর দিকে একথাও পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে যে, তা সুসংবদ্ব করে পড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করেছিল।

এ থেকে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয় যে, কুরআন মজীদের বর্তমান ক্রমবিণ্যাস সরাসরি আল্লাহ তাআলার নির্দেশনার অধীনে হয়েছে মহানবী (স) নিজ মর্জি মাফিক তার বিন্যাস করেননি। এখন কেউ কি কুরআন মজীদে থেকে এমন কোন নির্দেশ বের করে দেখাতে পারবে যে, এর সূরাসমূহ বর্তমান বিন্যাস অনুযায়ী পড়তে হবে এবং এর বিভিন্ন আয়াতসমূহকে কোথায় কোন প্রেক্ষাপটে রাখতে হবে? যদি কুরআন মজীদে এ ধরনের কোন হেদায়াত না থেকে থাকে এবং এটা সুস্পষ্ট যে, এধরনের কোন হুকুম তাতে নাই, তখন অবশ্যম্ভাবীরূপে কুরআন বহির্ভূত কিছু নির্দেশ আল্লাহর পক্ষা থেকে মহানবী (স) লাভ করে থাকবেন যার অধীনে তিনি এই পবিত্র গ্রন্থ বর্তমান বিন্যাস পাঠ করেছেন এবং সাহাবীদের পড়িয়েছেন। উপরন্ত সূরা আল-কিয়ামায় আল-কিয়ামায় আল্লাহ এও বলেছেন যে-“অতপর এর তাৎপর্য বুঝিয়ে দেয়া আমারদের দায়িত্ব”-(আয়াত নং ১৯)।

উপরোক্ত আলোচনায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, কুরআনের বিধিবিধান ও শিক্ষার যে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ মহানবী (স) নিজের কথা ও কাজের মাধ্যমে দান করতেন তা তার নিজস্ব মস্তিষ্ক প্রসূত ছিল না, বরং যেই মহান পবিত্র সত্তা তার উপর কুরআন নাযিল করতেন তিনিই তাকে এর তাৎপর্য বুঝিয়ে দিতেন এবং এর যেসব বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ দানের প্রয়োজন ছিল তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতেন। কুরআনের উপর ঈমানের দাবীদার কোন ব্যক্তিই তা মানতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে না।